ভারতবর্ষের মতো জনঘনত্বের দেশে নারী স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা বা সচেতনতা খুবই প্রয়োজনীয়। কারণ এখনো আমাদের দেশের অনেকটা অংশের মেয়েরা এই ব্যাপারে উদাসীন। যেহেতু আমাদের দেশের 60% মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন সেই কারণে নারী স্বাস্থ্য বা সেই সংক্রান্ত সাবধানতার মতো অত্যন্ত জরুরী বিষয়গুলো প্রাধান্য সেভাবে পায়না। তার সঙ্গে আছে বিভিন্ন কুসংস্কার এবং প্রকৃত জ্ঞানের অভাব। এর ফলস্বরূপ এখনো এমন অনেক জায়গা আছে আমাদের দেশে যেখানে বিজ্ঞানের অগ্রগতির যুগেও মেয়েরা বিভিন্ন সংক্রমণ ও রোগের সম্মুখীন হন শুধুমাত্র সাবধানতার অভাবে।
নারী স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে গেলে আমাদের প্রথমেই যা সম্মুখীন হতে হয় তা হল বিভিন্ন ধরনের ভুল ধারণা এবং menstruation নিয়ে নানাবিধ কুসংস্কারের। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এবং প্রকৃত কারণ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ থেকেই অনেক মেয়েরাই অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি শারীরবৃত্তীয় ঘটনাকে লজ্জার কারণ হিসেবে গণ্য করতে শুরু করেন। এমনকি সমীক্ষায় উঠে এসেছে প্রায় 50% মেয়েরা সম্পূর্ণ অচেতন থাকেন তাদের বয়সন্ধিকালীন শারীরিক পরিবর্তন সম্পর্কে।
সুস্থ মাতৃত্ব থেকেই সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে পারে। কিন্তু অজ্ঞানতার অন্ধকার মাখা মাতৃত্ব মা ও সন্তান উভয়ের জন্যই বিপদ ডেকে আনে। নিয়মিতভাবেই নিজস্ব পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা বা নিয়মিত নির্দিষ্ট সময় অন্তর স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার এসব অতিপ্রয়োজনীয় নারীস্বাস্থ্য সম্বন্ধীয় বিষয়গুলি নিয়ে আরো অনেক বেশি আলোচনা ও সচেতনতার প্রয়োজন।
এই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই ‘তরী সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ উদ্যোগ নিয়েছি নারী স্বাস্থ্য সম্পর্কে স্থানীয় মেয়েদের সচেতন করার। ‘তরী’র মহিলা সদস্যরা নির্দিষ্ট সময় অন্তর নির্দিষ্ট গ্রামে ঘুরে এই সংক্রান্ত প্রচার চালান।
মহিলাদের নিজস্ব পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য। এবং এই ক্ষেত্রে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার বৃদ্ধি করাও এই উদ্যোগের একটি দিক।
আসলে আজও আমাদের সমাজে মহিলাদের menstruation সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনার অভাব যথেষ্ট পরিমাণে লক্ষ্য করা যায়। এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে প্রচলিত ভুল ধারনা অশিক্ষা ও কুসংস্কারের গন্ডি আবদ্ধ করে রাখে তাদের ভাবনা চিন্তার সীমারেখাকে।
এক সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে নারী-পুরুষ উভয়েরই ভূমিকা সমান। সেক্ষেত্রে যদি সমাজের অর্ধেক অংশ অজ্ঞানতার অন্ধকারে থাকে তবে সেই সমাজের অগ্রগতিতে রুখে যায়। কাজেই সমাজের প্রয়োজনে ও সুস্থ স্বাভাবিক জীবনের উদ্দেশ্যে এই নারীস্বাস্থ্য জাতীয় বিষয়গুলির আরো অনেক বেশি প্রচার প্রয়োজন। সে বিষয়ে শুধুমাত্র সরকারি সচেতনতা নয়, প্রয়োজন প্রত্যেকের এগিয়ে আসার। আমরা সবাই সচেতন হলে তবেই এই উদ্দেশ্য সফলকাম হবে।