সচেতন সমাজ

সামাজিক জীব হিসেবে সমাজের প্রতি দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে আমরা পারি না কখনোই। মানুষের প্রকৃত লক্ষ্য হওয়া উচিত মানবতার প্রকাশ ঘটিয়ে সমাজের উন্নতি সাধন। এই বিষয়ে সব থেকে বেশি এই মুহূর্তে যা আমাদের চোখে পড়ে তা হলো প্রাকৃতিক পরিবেশের বিপুল ক্ষতি এবং ক্রমাগত জীবকুলের ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাওয়া। যে প্রকৃতি থেকে আমাদের উৎপত্তি, যার হাওয়াই নিঃশ্বাস, যার খাদ্য পুষ্টি, সেই আদি শক্তি কে উপেক্ষা করেই আমরা এগিয়ে চলেছি এক ধ্বংসের দিকে। এ এক অদ্ভুত অজ্ঞানতা আমাদের। প্রকৃতির রোশ আছড়ে পড়ছে বারবার, সাবধান বাণী শোনাচ্ছে আমরা তবুও নির্বিকার, নিশ্চল। আমরা কেটে চলেছি গাছ, বুঝিয়ে দিচ্ছি জলাভূমি, ভর্তি করছি পুকুর। আমরা ভেবে দেখছি না কি এর পরিণাম। ফলত বারংবার ঘূর্ণিঝড়, খরা, কখনো অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি ফসলের বিপুল ক্ষতি এসব কিছুর সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদের। এখনো পর্যন্ত উপকূলীয় এবং প্রান্তিক অঞ্চলে এর প্রভাব বেশি তাই অধিকাংশ নাগরিক মানুষ এই বিষয়ে নির্বিকার। প্রকৃতির অমেঘ অস্ত্র নেমে আসবে গোটা জীবনের উপর।

এই বিষয়ে কাজ করতে ‘তরী সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ জোর দিয়েছে বৃক্ষ রোপনের উপর। কারণ গাছই একমাত্র অস্ত্র যা আমাদের রক্ষা করতে পারে প্রাকৃতিক রুদ্ররোষ থেকে। আমফান ইয়াস ইত্যাদি ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রচুর গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। বহু পুরনো বটগাছ যেসব ছায়া বিস্তার করতো, পথ জুড়ে তারা অবলুপ্ত হয়েছে। সঙ্গে ক্ষতি হয়ে গেছে অনেক পাখি জীব পোকামাকড়ের। যারা জীব বৈচিত্রের সমবন্টন ও ভারসাম্য বজায় রাখতে জরুরি ভূমিকা পালন করে।

এই ক্ষতির প্রতিকার করতে উদ্যোগী আমরা। ইতিমধ্যে অনেক জায়গায় চারা গাছ বসানো হয়েছে। এবং ভবিষ্যতেও এই উদ্যোগ জারি রাখবো আমরা।

প্রকৃতির আশীর্বাদে মানুষ জীবকুলের শ্রেষ্ঠতম জীব হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করতে পেরেছিল। তার মনন, জ্ঞান, বুদ্ধি, চিন্তা করার ক্ষমতা সবই ছিল অন্য জীবেদের থেকে অনেক বেশি। কিন্তু ক্ষমতার সাথে অঙ্গাঙ্গীক ভাবে জড়িয়ে থাকে দায়িত্ব। শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে মানুষের দায়িত্ব ছিল প্রকৃতির অন্যান্য জীবদের রক্ষা করা তাদের বাঁচিয়ে রাখা। মানবকুল সে দায়িত্ব পালনে অক্ষম প্রমাণ করেছে নিজেদের। অন্যান্য দুর্বল জীবেদের রক্ষা করা তো দূর অস্ত আমরা বারবার কেড়ে নিয়েছি তাদের থাকার জায়গা, তাদের বিচরণ ক্ষেত্র তাদের স্বাভাবিক পরিবেশ। ফলত বহু জীব আজ লুপ্তপ্রায়, অনেক প্রজাতি এখন বিপন্ন। পরিবেশের ভারসাম্য গেছে টালমাটাল হয়ে।

আর কবে বুঝব আমরা? আর কতটা দেরী হবার পর ঘুম ভাঙবে আমাদের চেতনার? সময় আর নেই হাতে। এক্ষুনি এই মুহূর্তে সতর্ক না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ক্ষমা করবে না আমাদের। আমরাই বা কি জবাব দেবো নিজেদের বিবেকের কাছে? আমরা এতদিন শুধু প্রকৃতির থেকে নিয়ে এসেছি খাদ্য ও বিশুদ্ধ অক্সিজেন, জীবনধারণের যাবতীয় প্রয়োজনে হাত পেতেছি প্রকৃতির কাছে বদলে দিইনি কিছুই। এখন সময় কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার। এবার শোধ করতেই হবে প্রকৃতির ঋণ, অরণ্য বনানী বৃক্ষরাজি, পুকুর, জলাভূমি। আর তা না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পানীয় অযোগ্য জল দূষিত ধোঁয়ায় ভরা বাতাস পূর্ণ এক পৃথিবী অপেক্ষা করে আছে।

Leave a Comment